প্লাষ্টিক বর্জ্যরে টেকসই ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত নাগরিক আলোচনা সভা পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম অনুষ্ঠিত
পরিবেশ অধিদপ্তর ও জাতিসংঘ শিল্প উন্নয়ন সংস্থা UNIDO যৌথ উদ্যোগে চট্টগ্রাম জহুর আহমদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে প্লাষ্টিক বর্জ্যরে টেকসই ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত নাগরিক আলোচনা সভা পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম অনুষ্ঠিত হয়।
সরকারের পরিবেশ অধিদপ্তর এবং UNIDO এর কারিগরী সহায়তায় ও নরওয়ে সরকারের আর্থিক সহায়তায় আজ সকালে চট্টগ্রামের জহুর আহমদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে চলমান বিপিএল টি-২০ ক্রিকেট ম্যাচ চলাকালে এক নাগরিক আলোচনা সভা এবং প্লাস্টিক বর্জ্য পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম পরিচালিত হয়। এই অনুষ্ঠানটি ছিল পরিবেশ অধিদপ্তর এবং টঘওউঙ – এর যৌথ উদ্যোগে চলমান ৬০টি অনুরূপ আলোচনা সভা ও পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রমের অংশ বিশেষ। এই কার্যক্রম চলছে “টেকসই প্লাস্টিক ব্যবহার ও বাংলাদেশে নৌ-দূষনের প্রতিরোধ সমন্বিত উদ্যোগে” শীর্ষক প্রকল্পোর আওতায়।
চট্টগ্রামে এই আলোচনা সভা ও পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রমের অনুষ্ঠানে সম্মানিত আমন্ত্রিত অতিথিবৃন্দের মধ্যে ছিলেন প্রধান অতিথি পরিচালক, পরিবেশ অধিদপ্তর, চট্টগ্রাম মেট্রো সোনিয়া সুলতানা; বিশেষ অতিথি পরিচালক (ল্যাব) পরিবেশ অধিদপ্তর, চট্টগ্রাম নাসিম ফারহানা শিরিন, পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক এবং প্রকল্প প্রধান ড: আবদুল্লাহ আল মামুন, অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মুজাহিদুর রহমান, সহকারী পরিচালক মারুফ মোহাইমেন, ইউনিডো’র ন্যাশনাল এক্সপার্ট এস. এম. আরাফাত এবং ইউনিডো’র ন্যাশনাল প্রেজেক্ট কো-অর্ডিনেটর সত্য রঞ্জন ভট্টাচার্য প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি চট্টগ্রাম মেট্রেপলিটনের, পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক সোনিয়া সুলতানা প্ল্যাস্টিক বর্জ্যরে সুষ্ঠ ব্যবস্থাপনার গুরুত্ব তুলে ধরে পরিবেশের সকল উপকারভোগী, বিশেষ করে তরুন প্রজন্মকে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এবং অপচনশীল বর্জ্য দ্বারা দেশের মাটি, পানি ও বাতাস দূষণের বিরূদ্ধে সক্রিয় ভুমিকা পালনের আহŸান জানান। তিনি বলেন “আমাদের জীবনযাত্রা এবং পরিবেশের সকল ক্ষেত্রে সর্বনাশ সাধন করছে অপচনশীল এই প্লাস্টিক বর্জ্য। প্লাস্টিক থেকে সৃষ্ট মাইক্রো-প্লাস্টিক অনুকনা সকল জীবিত প্রাণী ও উদ্ভিদের প্রতি মারাত্বক ক্ষতিকর। সোনিয়া সুলতানা এই চলমান নাগরিক সচেতনতা ও উদ্ভুদ্ধকরণ অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্য আয়োজক প্রতিষ্ঠান ও সংস্থাগুলির প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তিনি এহেন পরিবেশ সাশ্রয়ী উদ্যোগ গ্রহন করায় পরিবেশ অধিদপ্তর, টঘওউঙ এবং নরওয়ে সরকারের ধন্যবাদ জানান।
বিশেষ অতিথি পরিচালক (ল্যাব) পরিবেশ অধিদপ্তর, চট্টগ্রাম, নাসিম ফারহানা শিরিন তার ভাষণে টঘওউঙ এবং নরওয়ে সরকারের প্রতি বাংলাদেশে নেতৃস্থানীয় প্লাস্টিক দূষণ প্রতিরোধে এই উদ্যোগ গ্রহণের জন্য ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। দূষণের অনিবার্য পরিনতির কথা বর্ননা করে তিনি মন্তব্য করেন এই মারাত্বক দূষণ মানুষের জীবন, উদ্ভিদ ও সমগ্র জলজ প্রাণী জগতের টিকে থাকার জন্য একটি মারাত্বক হুমকি, যা ক্যান্সারসহ বিভিন্ন রোগ বিমারের অন্যতম প্রধান কারণ। তিনি বলে “ প্লাস্টিক দূষণ প্রতিরোধে আমাদেরকে ‘থ্রি-আর’ পদ্ধতি (অর্থাৎ রিডিউস, রিইউজ এবং রিসাইকেল) অনুসরণ করা উচিত এবং তাহলেই আমরা প্লাস্টিক বর্জ্য দ্বারা পরিবেশ দূষণের মাত্রা কমাতে সক্ষম হবো।”
ইউনিডো’র ন্যাশনাল প্রেজেক্ট কো-অর্ডিনেটর সত্য রঞ্জন ভট্টাচার্য তার বক্তব্যে টেকসই প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও নৌ-দূষণ প্রতিকার প্রকল্পের পটবূমি ও কার্যক্রম তুলে ধরে বলেন “সকাল থেকে ঘুমানোর আগ পর্যন্ত আমরা প্লাস্টিক নিয়েই চলি। এর মধ্যে দিনের শুরুতে টুথব্রাশ, চিরুনী থেকে শুরু করে সারা দিনের ব্যবহার্য দ্রব্য সামগ্রীর মধ্যে প্লাস্টিকই ব্যাপকভাবে ব্যবহ্নত হয়। আমরা যখন প্লাস্টিকের ব্যবহার পুরোপুরি থামাতে পারছি না, আমরা যখন প্লাস্টিকের ব্যবহার পুরোপুরি থামাতে পারছি না, আমরা তখন প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় থ্রি-আর পদ্ধতি রিডিউস, রিইউজ এবং রিসাইকেল) অনুসরন করতে পারি।” তিনি চট্টগ্রাম রোভার স্কাউট পরিবেশ কর্মীদের প্রতি চট্টগ্রাম স্টেডিয়াম পরিচ্ছন্নতা ব্রিগেড গঠনের জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন “ তাদের এই উদ্যোগ অপচনশীল প্লাস্টিক দূষণ প্রতিরোধে অন্যান্য পরিবেশ কর্মীদের প্রেরণা যোগাবে।”
পরিবেশ অধিদপ্তরের প্রকল্প পরিচালক এবং নৌবজ্য প্রকল্পের প্রধান ড. আবদুল্লাহ আল মামুন অনুষ্ঠানে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন এবং জনগনের প্রতি নির্দয় দূষনের ব্যাপারে বিশেষ করে প্লাস্টিক দূষণের ক্ষেত্রে সজাগ এবং সক্রিয় থাকার আহŸান জানান। দেশের তরুন সমাজের ইতিবাচক অবদান তুলে ধরে তিনি বলেন, “এখন যারা নবীন, তারাই হবেন আগামীর পূর্ণ বলিষ্ঠ নাগরিক। ফলে তাদের উচিত নিজ নিজ ভুমিকা আন্তরিকভাবে পালন করা এবং অন্যদের কেও প্লাস্টিক দূষণ প্রতিকারে অনুপ্রাণিত করা, যাতে তাদের পরবর্তী প্রজন্ম একটি দূষণমুক্ত প্রাকৃতিক পরিবেশে নিরাপদে জীবন যাপন করতে পারে।
এই অনুষ্ঠানের অন্যদের মধ্যে উপ-প্রকল্প পরিচালক, পরিবেশ অধিদপ্তরের কাজী সুমন, সহকারী পরিচালক পরিবেশ অধিদপ্তর এবং সহকারী পরিচালক রুমানা আক্তার, চট্টগ্রাম মেট্রোর পরিবেশ কর্মকর্তা মো: হোজাইফা সরকার প্রমুখ এবং অধিদপ্তরের কেমিস্ট এবং পরিবেশ কর্মকর্তাগণও উপস্থিত ছিলেন।
চট্টগ্রামের রোভার স্কাউট ইউনিটের ২৫ জন স্বেচ্ছাসেবী পরিবেশ কর্মী এই আলোচনা এবং স্টেডিয়াম মাঠপরিচ্ছন্নতা কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করেন, যারা ইতিমধ্যেই চট্টগ্রাম ক্রিকেট স্টেডিয়ামকে প্লাস্টিকমুক্ত হিসাব গড়ে তুলেছেন। আজকের এই প্রতীকী পরিচ্ছন্নতা অভিযানে তারা৬০ কেজির মতো প্লাস্টিক বর্জ্য সংগ্রহ করেন যা পরবর্তী পর্যায়ে নিদ্ধারিত পাত্রে সংগ্রহ করা হয়।