মাছের বাজারে আগুন, মৌসুমেও ইলিশ দুর্লভ

রাজধানীর কাঁচাবাজারে মাছের দাম একের পর এক বাড়ছে। চাল-ডাল ও শাকসবজির মতো মাছও এখন সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। ভরা মৌসুমেও ইলিশের সরবরাহ কম থাকায় বাজারে দামের চাপে মধ্যবিত্ত ও স্বল্প আয়ের মানুষের নাভিশ্বাস উঠছে।
শুক্রবার (১২ সেপ্টেম্বর) সকালে রাজধানীর রামপুরা ও বনশ্রী বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রায় সব ধরনের মাছের কেজিপ্রতি দাম এক সপ্তাহে ৫০ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। সুপারশপগুলোতেও একই অবস্থা।
বর্তমান বাজারদর অনুযায়ী, কোরাল বিক্রি হচ্ছে ৮০০–৯০০ টাকায়, আইড় ৬০০–৭৫০ টাকায়, আর চিংড়ি (বাগদা ও গলদা) আকারভেদে ৭৫০ থেকে ১২০০ টাকা পর্যন্ত। ছোট চিংড়ি মিলছে কেজিপ্রতি ১০০০–১২০০ টাকায়।
দেশি মাছের মধ্যে রুই-কাতলা ৩৫০–৪৫০ টাকা, পাবদা ৪০০–৬০০ টাকা, শিং ৪০০–৫০০ টাকা, টেংরা ৬০০–৭০০ টাকা, পুঁটি ২০০–২৫০ টাকা, সরপুঁটি ৩০০–৪৫০ টাকা, তেলাপিয়া ২৫০–৩০০ টাকা, নাইলোটিকা ২২০–২৮০ টাকা, কৈ ২০০–২২০ টাকা এবং পাঙাস ও সিলভার কার্প ২৫০–২৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। চাষের বড় রুইয়ের কেজি উঠেছে ৫৫০ টাকা পর্যন্ত।
সবচেয়ে বেশি আলোচনায় ইলিশ। মৌসুম হলেও সরবরাহ সীমিত। বাজারে এক কেজির নিচে ওজনের ইলিশ মিলছে ১৮০০–২০০০ টাকায়, ৫০০–৭০০ গ্রামের ইলিশ ১৫০০ টাকায় এবং বড় সাইজের ইলিশ (২–২.৫ কেজি) ৩০০০–৩৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
অন্যদিকে, ব্রয়লার মুরগি কেজিপ্রতি ১৮০ টাকা ও সোনালি মুরগি ২৯০–৩২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গত এক মাসে মুরগির দামও বেড়েছে ২০–৩০ টাকা। তবে গরুর মাংস ৭৫০–৭৮০ টাকা ও খাসির মাংস ১১০০–১২০০ টাকায় স্থিতিশীল রয়েছে।
ক্রেতাদের অভিযোগ, একসঙ্গে সব পণ্যের দাম বাড়ায় সংসার চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে। কাঠমিস্ত্রি বেলাল উদ্দিন বলেন, “এক মাস আগেও যে মাছ ৩২০ টাকায় কিনেছি, এখন সেটাই ৪০০ টাকা। বাজারে এলেই হতবাক হয়ে যাই।”
গৃহিণী সানজিদা হক জানান, “মুরগির দাম বাড়ায় মাছ খাওয়ার চিন্তা করেছিলাম, এখন মাছও হাতের বাইরে। সংসারের বাজেট গুছানোই কঠিন হয়ে গেছে।”
বিক্রেতাদের ব্যাখ্যা, পাইকারি বাজারেই দাম বাড়ছে। রামপুরার মাছ বিক্রেতা জামাল হোসেন বলেন, “নদীতে ইলিশ ধরা পড়ছে কম। সরবরাহ কম থাকায় দাম কমানো যাচ্ছে না।”
অন্যদিকে বনশ্রীর ব্যবসায়ী রফিক জানান, গরমে অনেক পুকুরের মাছ মারা গেছে, চাষিরা বড় ক্ষতির মুখে পড়েছেন। ফলে তারা বেশি দামে মাছ ছাড়ছেন। আরেক বিক্রেতা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, “কোরবানির ঈদের পর থেকেই পাইকারদের কাছ থেকে বেশি দামে কিনতে হচ্ছে, তাই আমরাও বেশি দামে বিক্রি করছি।”