বিশ্বনবী মুহাম্মদ (সা.) স্বদেশ প্রেমের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত

মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম

বিশ্বনবী মুহাম্মদ (সা.) স্বদেশ প্রেমের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত ও আমাদের অনুসৃত মহোত্তম আদর্শ। তাঁর উপর নবুয়াতের মহান দায়িত্ব অর্পন ও আল্লাহর একমাত্র
মনোনীত দ্বীন (জীবন বিধান) ইসলাম প্রতিষ্ঠার দায়িত্ব অর্পিত হলে তিনি তার স্বদেশ মক্কার জনগণকে এ দ্বীনের দাওয়াত দিতে থাকলেন। অথচ তার সে দাওয়াতে স্বদেশের জনগণের মধ্য থেকে মুষ্টিমেয় কিছু লোক ছাড়া বাকীরা তার দাওয়াত প্রত্যাখান করে। উপরন্তু এই মহান কাজে প্রতি পদে পদে বিভিন্নভাবে বাধা সৃষ্টি করে। এক পর্যায়ে স্বগোত্রীয় ও স্বদেশী বর্বর জাহেলরা নবী (সা.) এবং তার দাওয়াত কবুলকারী নওমুসলিম সাহাবীদের উপর চরম নির্যাতন ও অত্যাচার শুরু করে। এমনকি তার প্রাণনাশে বদ্ধপরিকর হয়। মক্কাবাসীর অত্যাচার অতিষ্ট হয়ে সেখান থেকে মদীনায় হিজরতের সময় স্বীয় জন্মভূমির প্রতি তিনি বার বার ফিরে তাকান এবং কাতর কন্ঠে আফসোস করে বলেন;
مكة أحب البلاد إلى لولا أخرجت لما خرجت
“মক্কা আমার নিকট সবচেয়ে প্রিয় দেশ, যদি সে আমাকে বের করে না দিত তবে আমি বের হতাম না’’।
তাই কবি লিখেছেন- “মক্কা ছেড়ে দ্বীনের নবী মদীনাতে যায় / জন্মভূমির মায়ায় নবী ফিরে ফিরে চায়’’।
অতঃপর অষ্টম হিজরীতে ঐতিহাসিক মক্কা বিজয়ের পর বিজয়ীবেশে মক্কায় প্রবেশ করলেন এবং অতীত অত্যাচার ও নির্যাতনের কথা ভুলে গিয়ে দেশবাসীর প্রতি সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করলেন। জাহেলিয়াতের যুগের পরিসমাপ্তি ঘটিয়ে দেশপ্রেম, উদারতা ও মহানুভবতার নিদর্শন রাখলেন। হযরত ইউসুফ (আঃ) তাঁর ভাইদের ক্ষেত্রে যা করেছিলেন তিনিও তাই করলেন:
قال رسول الله صلى الله عليه وسلم- لا تثريب عليكم اليوم يغفر الله لكم
“রাসূল (সা.) বলেন আজ তোমাদের প্রতি আমার কোন অভিযোগ নেই, আল্লাহ তোমাদের ক্ষমা করুন।’’ (সূরা ইউসুফ: ৯২)
সাধারণ ক্ষমা পেয়ে সমগ্র আরববাসী ঐক্যবদ্ধ জাতিতে পরিণত ও দেশ গঠনে নিবেদিত হলেন। উঁচু-নীচ, ধনী-গরীব সবাই সম অধিকার পেয়ে মানবিক বিশ্ব গড়ার ভিত্তি স্থাপন করলেন। মহানবী সা: নবগঠিত রাষ্ট্রের শাসক হিসাবে হিসাবে মানবতা ও দায়িত্বশীলতার অনুপম দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন।
একজন দেশপ্রেমিক শাসকের কর্তব্য:
الَّذِينَ إِن مَّكَّنَّاهُمْ فِي الْأَرْضِ أَقَامُوا الصَّلَاةَ وَآتَوُا الزَّكَاةَ وَأَمَرُوا بِالْمَعْرُوفِ وَنَهَوْا عَنِ الْمُنكَرِ وَلِلَّهِ عَاقِبَةُ الْأُمُورِ
“তারা এমন লোক যাদেরকে আমি পৃথিবীতে শক্তি-সামর্থ? দান করলে তারা নামায কায়েম করবে, যাকাত দেবে এবং সৎকাজে আদেশ ও অসৎকাজে নিষেধ করবে। প্রত্যেক কর্মের পরিণাম আল্লাহর এখতিয়ারভূক্ত ’’। (সূরা আল হজ্জ্ব: ৪১)
উপরোক্ত আয়াতে একজন দেশপ্রেমিক শাসকের জন্য প্রধান চারটি কাজ নির্ধারণ করে দিয়েছেন। সালাত কায়েম, যাকাত আদায়, সত্য ও ন্যায়ের নির্দেশ এবং অসত্য ও অন্যায় থেকে নিজে বিরত থাকা এবং অন্যকে বিরত রাখা। দেশের কোন শাসক যদি আল্লাহর নির্ধারিত এই চার কর্মসূচি আঞ্জাম দিতে না পারেন তাকে সত্যিকার দেশপ্রেমিক শাসক বলা যাবে না।
আমাদের সবাইকে দায়িত্বশীল আচরণ প্রদর্শনের তৌফিক দান করুন।

আরো