দেশ পরিবর্তনের পূর্বশর্ত হচ্ছে- মানুষের পরিবর্তন

মুস্তাফিজুর রহমান ভূঁইয়া, খাগড়াছড়ি

একটি দেশের প্রকৃত উন্নয়ন নির্ভর করে,তার জনগণের চিন্তাধারা, নৈতিকতা ও দৃষ্টিভঙ্গির উপর।শুধু অবকাঠাম নির্মাণ,উন্নয়ন প্রকল্প বা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কোন জাতির স্থায়ী সমৃদ্ধি নিশ্চিত করতে পারে না; যদি না সেই জাতির মানুষ নিজেদের মানসিকতা ও অভ্যাস পরিবর্তন না করে।
ইতিহাস বলে,”সভ্যতার বিকাশ হয়েছে তখনই,যখন মানুষ নিজেকে পরিবর্তন করেছে”। নিজের চিন্তার প্রসার ঘটিয়েছে এবং পুরানো ধ্যান ধারণার বাহিরে গিয়ে নতুন কিছুকে গ্রহণ করেছে।পরিবর্তন যদি কেবল বাহিক্য হয় তবে সেটি সাময়িক; কিন্তু যখন তা মানুষের মনন ও চেতনার গভীরে স্থান করে নেয়, তখনই সত্যিকারের পরিবর্তন ঘটে।যা আমাদের প্রাণপ্রিয় শ্রদ্ধেয় গুরুজি শহীদ আল বুখারী মহাজাতক কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন এর মাধ্যমে প্রতিনিয়ত বাস্তবায়ন করে চলছে।সাব্বাস গুরুজী চালিয়ে যান।
দেশ প্রেমিক ভালো মানুষগুলো আপনার পাশেই আছেএবং থাকবে।
লিও টলস্টয় বলেছিলেন,”বিশ্বকে বদলাতে চাও,তাহলে প্রথমে নিজেকে বদলাও।যা গুরুজি প্রতিনিয়ত বলে থাকেন।কিন্তু আমরা অধিকাংশ সময় রাষ্ট্র,সমাজ বা অন্যদের দোষ দেই,অথচ নিজের দিকে একবারও তাকাই না।আমরা চাই দেশ বদলাবে কিন্তু নিজেকে বদলাতে চাই না।একজন মানুষ প্রতিদিন যদি ট্রাফিক আইন ভাঙ্গে,ঘুষ খাওয়ার সুযোগ নেয়, অসৎ পথেই নিজের স্বার্থ হাসিল করে,তাহলে সে কিভাবে আশা করে রাষ্ট্রে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হবে।রাষ্ট্রের পরিবর্তন কোন যাদুর বিষয় নয়;একটি মানুষের সম্মিলিত পরিবর্তনের ফল।
শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য,শুধু তথ্য অর্জন নয়,বরং চিন্তার স্বাধীনতা, নৈতিকতা ও আত্মবিকাশ নিশ্চিত করা।সক্রেটিস বলেছিলেন “শিক্ষার প্রকৃত উদ্দেশ্য হলো মানুষকে চিন্তাশীল ও আত্ম জিজ্ঞাসার সক্ষমতা দেওয়া”।অথচ আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা আজ মুখস্থ নির্ভর,যা কেবল পরীক্ষায় ভালো নাম্বার পেতে শেখায়,কিন্তু কোনটি সঠিক-ভুল যাচাই করার ক্ষমতা তৈরি করে না।ফলে সমাজে দুর্নীতিবাজদের সংখ্যা বাড়ছে,আর প্রকৃত জ্ঞানী ও নৈতিক মানুষের সংখ্যা কমছে।শিক্ষা যদি বিবেকবান মানুষ তৈরি না করে তবে তা সমাজে কোন ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে পারে না।
রাজনীতিতে বারবার পরিবর্তন এসেছে।সরকার বদল হয়েছে কিন্তু রাজনীতির সংস্কৃতিতে তেমন কোন পরিবর্তন/উন্নয়ন হয়নি।ক্ষমতা ধরে রাখা, প্রতিপক্ষকে দমন করা, দুর্নীতির মাধ্যমে নিজের সুবিধা নিশ্চিত করা,রাজনীতির প্রধান লক্ষ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে।
অ্যাডাম স্মিথ বলেছিলেন, “একটি জাতির প্রকৃত সম্পদ হলো তার শ্রমজীবী জনগণ”।আজ আমরা দেখছি কিছু মানুষ অঢেল সম্পদের মালিক হয়ে যাচ্ছে আর কিছু মানুষ একবেলা খেতে পারছে না।আমাদের দেশে শ্রমজীবী মানুষের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠা হয়নি।তাদের কষ্টার্জিত অর্থ ধনী শ্রেণীর হাতে চলে যাচ্ছে। বৈষম্য দিন দিন বাড়ছে।অর্থনীতির এই অসামঞ্জস্য দূর না হলে,দেশ যতই উন্নত বলে প্রচার করা হোক তা প্রকৃত অর্থে উন্নয়ন হবে না।
কনফুসিয়াস বলেছিলেন,”একটি সমাজ তখনই উন্নত হয়,যখন মানুষ নিজের স্বার্থের চেয়ে ন্যায়ের কথা বেশি চিন্তা করে”।কিন্তু আমরা কি সত্যিই ন্যায়ের কথা ভাবি নাকি শুধু নিজের লাভ-ক্ষতির হিসাব কষি, সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয় হলে রাষ্ট্র কখনোই শক্ত ভিত্তির উপর দাঁড়াতে পারে না।সমাজে নৈতিক অবক্ষয় অর্থবহ আকার ধারণ করেছেন।পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ,সহনশীলতা ও মানবিক মূল্যবোধ হারিয়ে যাচ্ছে।মানুষ এখন নিজের স্বার্থের বাইরে কিছুই ভাবতে চায় না।
মহাত্মা গান্ধী বলেছিলেন,”তুমি নিজেই সেই পরিবর্তন হও, যা তুমি বিশ্বে দেখতে চাও”।অথচ আমরা নিজেদের না বদলিয়ে শুধু চারিপাশের পরিবর্তনের জন্য অপেক্ষা করে থাকি।আমরা চাই দুর্নীতি দূর হোক, অথচ নিজেদের কাজের জায়গায় সৎ থাকতে পারিনা।অথচ নিজের স্বার্থের জন্য অন্যের ক্ষতি করতেও পিছ-পা হইনা।আইন করে,প্রশাসন দিয়ে বা উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করে রাষ্ট্রের কাঠামো বদলানো সম্ভব কিন্তু মানুষের চিন্তাও নৈতিকতা না বদলালে;সেই পরিবর্তন কোনদিন স্থায়ী হয় না।বাহিক্য পরিবর্তন কখনো স্থায়ী নয় যদি তা মানুষের মন থেকে না আসে।
তাই রাষ্ট্রকে বদলাতে হলে- আগে নাগরিকদের বদলাতে হবে।প্রত্যেকে নিজ নিজ জায়গায় সৎ দায়িত্বশীল ও সচেতন হতে হবে।যদি আমরা নিজেদের বদলাই তবে সমাজ বদলাবে আর সমাজ বদলালে দেশও বদলে যাবে। কারণ মানুষ পরিবর্তন না হলে দেশ কখনো পরিবর্তন হবে না।
আধুনিক রাষ্ট্রবিজ্ঞানের জনক মেকিয়াভেলি “The prince” গ্রন্থে বলেছেন,”মানুষ সহজাত স্বার্থপর।তাই রাষ্ট্রকে কঠোর আইন করে তার স্বার্থপরতার ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণে আনতে হয়।মানুষ শুধু শুধু স্বেচ্ছায় ভালো হয়ে যায় না।এক্ষেত্রে দুর্নীতির জন্য কঠোর আইন (চীনের ন্যায় প্রয়োজনে মৃতুদণ্ড)ও প্রয়োগ থাকতে হবে।
পৃথিবীতে কোন মানুষই অ-শান্তি চায় না অথচ সকল শান্তির মূল কারণই হলো মানুষ।
শেষত:বলতে গেলে বলতে হয়, কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন এর সেই বিখ্যাত উক্তি”দৃষ্টিভঙ্গি বদলান, জীবন বদলে যাবে,সেই সাথে দেশ ও বদলে যাবে।

আরো